বাংলাদেশিরা কতটা সুবিধা পাবেন সৌদির নতুন শ্রম আইনে?

বাংলাদেশিরা কতটা সুবিধা পাবেন সৌদির নতুন শ্রম আইনে?
বাংলাদেশিরা কতটা সুবিধা পাবেন সৌদির নতুন শ্রম আইনে?

সৌদি আরবে গত রোববার থেকে কার্যকর হয়েছে সংশোধিত শ্রম আইন। এতে বিতর্কিত কাফালা ব্যবস্থায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এরপরও প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে, এর মাধ্যমে কতটা লাভ হবে এবং এর সুবিধা কি সব প্রবাসী কর্মীই পাবেন?

জানা গেছে, সৌদির কাফালা ব্যবস্থায় আনা সংস্কারগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, এখন থেকে দেশটিতে কর্মরত প্রবাসীরা নিয়োগকর্তার অনুমতি ছাড়াই চাকরি পরিবর্তন করতে এবং বিদেশ ভ্রমণে যেতে পারবেন। এ বিষয়ে নিয়োগকর্তাকে সরাসরি লিখিতভাবে বা ইমেইলে জানালেই চলবে, পূর্বানুমতির দরকার পড়বে না।

এখন থেকে মেয়াদ শেষ হলে কর্মীরা চাকরি ছেড়েও দিতে পারবেন। এটি শুধু অনলাইনে জানালেই হবে। আর কোনো অনুমতি লাগবে না। এ বিষয়ে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলেকে বলেন, আগে প্রবাসী কর্মীরা কাজ পরিবর্তন করতে, এমনকি মেয়াদ শেষে চাইলেও স্বেচ্ছায় দেশে ফিরতে পারতেন না। এর জন্য নিয়োগকর্তার অনুমতি লাগত। এখন আর সেটা লাগবে না।

তবে এই সুবিধা পেতে কোনও প্রতিষ্ঠানে অন্তত এক বছর কাজ করতে হবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। এক বছর পরে চাইলে প্রবাসী কর্মীরা চাকরি পরিবর্তন এবং ছুটির সময় নিজের দেশসহ যেকোনও স্থানে যেতে পারবেন।

সেক্ষেত্রে অবশ্যই বৈধ নিয়োগপত্র থাকতে হবে। নাহলে প্রবাস জীবনে জটিলতার অবসান ঘটবে না। কাফালার নতুন নিয়মে বাংলাদেশের গৃহকর্মী বা ব্যক্তিগত পর্যায়ে যারা গেছেন, তারা এসব সুবিধা পাবেন কিনা জানতে চাইলে দূতাবাসের ওই কর্মকর্তা বলেন, বৈধ নিয়োগপত্র থাকলে সবাই সুবিধা পাবেন।

কিন্তু জনশক্তি রফতানিকারক ও বিশ্লেষক হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের মতে, গৃহকর্মীরা সরাসরি এই সুযোগ পাবেন না। কারণ, তারা কাজে নিযুক্ত হন কোনও একটি এজেন্সির মাধ্যমে। একারণে যদি ওই এজেন্সি যদি মনে করে, কোনও কারণে গৃহকর্মীর চাকরি পরিবর্তন করাবে, তাহলে তারা করে দিতে পারে।

যেসব প্রবাসী গাড়িচালক ব্যক্তিগত গাড়ি চালান, তারাও এই সুবিধা পাবেন না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাছাড়া, সৌদিতে চাকরি পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে অঞ্চলভিত্তিক। সেখানে নির্ধারিত অঞ্চলের বাইরে চাকরি পরিবর্তন করে যাওয়ার সুযোগ থাকছে না।

হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, সৌদি আরব নিজেদের স্বার্থেই শ্রম আইনে পরিবর্তন এনেছে। করোনাভাইরাসের কারণে শ্রমিকের স্বল্পতা এবং বাইরে থেকে শ্রমিক আমদানি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তবে সেখানে অবস্থানরত কর্মী, বিশেষ করে বাংলাদেশিরা এখন চাইলে চাকরি পরিবর্তন করতে পারবেন। বেশি বেতনে আরেক জায়গায় কাজ নিতে পারবেন। আগে তাদের পাসপোর্ট আটকে রাখা হতো। তারা চাকরি পরিবর্তন তো দূরের কথা, চাইলে দেশেও ফিরতে পারতেন না। এমনকি কেউ মারা গেলেও অনুমতি না মিললে দেশে মরদেহ পাঠানো যেত না।

সৌদি আরবে বাংলাদেশি দূতাবাসের কর্মকর্তা বলেন, আইনটির প্রয়োগ মাত্র শুরু হলো। ধীরে ধীরে সব পরিষ্কার হবে। এখন থেকে ভিসা পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আসবে। সিঙ্গেল এন্ট্রির পরিবর্তে প্রবাসী কর্মীদের মাল্টিপল ভিসা দেওয়া হবে।

তবে প্রতারকরা সৌদির নতুন নিয়মের সুযোগ নিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন ব্র্যাকের অভিবাসন বিভাগের প্রধান শরিফুল হাসান। তিনি ডয়েচে ভেলেকে বলেন, আমাদের দেশের প্রতারকরা এই আইনের সুযোগ নিতে পারে। তারা ফ্রি ভিসার কথা বলে সৌদি আরবে লোক পাঠানোর প্রতারণা করতে পারে। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

সৌদি আরবে বর্তমানে বিভিন্ন দেশের প্রায় এক কোটি প্রবাসী কর্মী রয়েছেন। এর মধ্যে বৈধ বাংলাদেশি কর্মী প্রায় ২০ লাখ। সেখানে তিন লাখ বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছেন। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৪০ হাজার মানুষ ভাগ্য বদলের আশায় সৌদি আরবে যান। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বর্তমানে ১০ হাজারের মতো বাংলাদেশি নাগরিক ডিপোর্টেশন সেন্টারে রয়েছেন, তার অধিকাংশই সৌদি আরবে। ২০১৪ সালে আট লাখ বাংলাদেশি সেখানে সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়েছেন।

সূত্র: Jagonews24

সর্বশেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২১, ২২:৫৯
Desk
এড্যমিন

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও